সুযোগ এসেছিল একদম শুরুতে। স্রেফ ২ রানেই ফেরত পাঠানো যেত ফাফ দু প্লেসিকে। কিন্তু সাকিব আল হাসানের বলে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেন না দিনেশ কার্তিক। জীবন পাওয়া দু প্লেসি বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে টানলেন দলকে। বাকিটা সারলেন বোলাররা। কলকাতা নাইট রাইডার্সকে সহজেই হারিয়ে শিরোপা জিতল চেন্নাই সুপার কিংস। দুবাইয়ে শুক্রবার ফাইনালে ২৭ রানে জিতেছে চেন্নাই। আইপিএলে মহেন্দ্র সিং ধোনির দলের এটি চতুর্থ শিরোপা। ফ্র্যাঞ্চাইজি এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ পাঁচটি শিরোপা জিতেছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। চেন্নাইয়ের ১৯২ রান তাড়ায় ৯ উইকেটে ১৬৫ রানে থামে কলকাতা।
অধিনায়ক হিসেবে নিজের তিনশতম টি-টোয়েন্টিতে ধোনি জিতলেন আরেকটি শিরোপা। আগেই এই আসর দিয়ে ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলকে বিদায় জানানোর আভাস দেওয়া কিপার-ব্যাটসম্যানের সম্ভাব্য শেষটা হলো দুর্দান্ত। ফাইনালে ৩ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে উইকেটশূন্য সাকিব। ব্যাটিংয়ে সুযোগ ছিল অনেক কিছু করার। কিন্তু পেলেন গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ। আগের ম্যাচেও আউট হয়েছিলেন শূন্য রানে। ম্যাচের নায়ক চেন্নাইয়ের ওপেনার দু প্লেসি। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে তিন ছক্কা ও সাত চারে ৫৯ বলে ৮৬ রান করেন তিনি। সঙ্গে তিনটি চমৎকার পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি উপহার দেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই ব্যাটসম্যান। টস জিতে বোলিং নেন কলকাতা অধিনায়ক ওয়েন মর্গ্যান। ধোনি জানান, জিতলে তিনিও বোলিং নিতেন। আগের ম্যাচগুলোর ধারাবাহিকতা ধরে রেখে প্রথম ওভারে সাকিবকে আক্রমণে আনেন মর্গ্যান। প্রথম তিন বলে দুটি সিঙ্গেল দেওয়া বাঁহাতি স্পিনারের পরের বলটি ছিল বাজে। লেগ স্টাম্পে শর্ট অব লেংথের ডেলিভারিতে অনায়াসে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মারেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। পরের দুটি বল অবশ্য তাকে ডট খেলান সাকিব। পরের ওভারে ফিরেই উইকেট পেতে পারতেন বাঁহাতি এই স্পিনার। বেরিয়ে এসে তাকে খেলার চেষ্টা করেন দু প্লেসি। তার মনোভাব বুঝে লেগ স্টাম্পের বাইরে বল করেন সাকিব। ব্যাটসম্যান পাননি বলের নাগাল, কিন্তু গ্লাভসে বল জমাতে পারেননি কিপার কার্তিক।
আগের ম্যাচেও সাকিবের বলে স্টাম্পিংয়ের একটি সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি। দু প্লেসি জীবন পাওয়ার সঙ্গে লেগ বাই থেকে বাড়তি একটি রান পায় চেন্নাই। স্ট্রাইক পেয়ে অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে বাউন্ডারি মারেন রুতুরাজ। পরের বল ছিল জোরের ওপর লেগ স্টাম্পে, অনায়াসে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে ছক্কায় ওড়ান ডানহাতি ব্যাটসম্যান। পরের তিন বলে আসে দুটি সিঙ্গেল। খরুচে হয়ে যায় সাকিবের প্রথম স্পেল; ২ ওভারে দেন ১৮ রান। দশম ওভারে আক্রমণে ফিরে প্রথম তিন বলে দুই রান দেওয়ার পর শেষ তিন বলে দুই ছক্কা হজম করেন সাকিব। লং অনের ওপর দিয়ে মারেন দু প্লেসি। রবিন উথাপা ওড়ান ডিপ মিডউইকেট দিয়ে।
সব মিলিয়ে ওভার থেকে আসে ১৫ রান। ৩২ রান করা রুতুরাজকে ফিরিয়ে ৬১ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন সুনিল নারাইন। তিন ছক্কায় ১৫ বলে ৩১ রান করা উথাপাকেও থামান তিনি। ভাঙেন দ্রুত এগোনো ৬৩ রানের জুটি।  আইপিএলতৃতীয় উইকেটে দু প্লেসির সঙ্গে ৬৮ রানের জুটিতে দলকে দুইশ রানের কাছে নিয়ে যাওয়া মইন আলি অপরাজিত থাকেন ৩৭ রানে। তার ২০ বলের ইনিংসে তিন ছক্কার সঙ্গে চার দুটি। চেন্নাই ব্যাটসম্যানের ঝড়ের সবচেয়ে জোর ঝাপটা গেছে লকি ফার্গুসনের ওপর দিয়ে। গতিময় এই পেসার ৪ ওভারে ৫৬ রান দিয়ে ছিলেন উইকেট। বড় রান তাড়ায় দুই ওপেনারের ব্যাটে ভালো শুরু পায় কলকাতা। কিন্তু ৯১ রানে শুরুর জুটি ভাঙার পর আর পেরে ওঠেনি দলটি। দুই ওপেনার ভেঙ্কটেশ আইয়ার (৫০) ও শুবমান গিল (৫১) ছাড়া প্রথম আট ব্যাটসম্যানের আর কেউ যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। সতীর্থদের ব্যর্থতার মিছিলে পঞ্চদশ ওভারে ক্রিজে গিয়েই রবীন্দ্র জাদেজার বলে দৃষ্টিকটু এক শটে এলবিডব্লিউ হন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। শেষ দিকে ফার্গুসন ও শিভাম মাভি ব্যবধান কিছুটা কমান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চেন্নাই সুপার কিংস: ২০ ওভারে ১৯২/৩ (রুতুরাজ ৩২, দু প্লেসি ৬৮, উথাপা ৩১, মইন ৩৭*; সাকিব ৩-০-৩৩-০, মাভি ৪-০-৩২-১, ফার্গুসন ৪-০-৫৬-০, বরুণ ৪-০-৩৮-০, নারাইন ৪-০-২৬-২, ভেঙ্কটেশ ১-০-৫-০)
কলকাতা নাইট রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৬৫/৯ (শুবমান ৫১, ভেঙ্কটেশ ৫০, নিতিশ ০, নারাইন ২, মর্গ্যান ৪, কার্তিক ৯, সাকিব ০, ত্রিপাঠি ২, ফার্গুসন ১৮*, মাভি ২০, বরুণ ০*; দিপক ৪-০-৩২-২, হেইজেলউড ৪-০-২৯-২, শার্দুল ৪-০-৩৮-৩, ব্রাভো ৪-০-২৯-১, জাদেজা ৪-০-৩৭-২
ফল: চেন্নাই সুপার কিংস ২৭ রানে জয়ী